দেবব্রত পাল বাপ্পি, লাকসাম প্রতিনিধি।।
কুমিল্লার দক্ষিনাঞ্চলের লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলায় প্রায় অর্ধশতাধিক মন্দিরে হিন্দু ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দূর্গাপূজাকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন এ অঞ্চলের প্রতিমা তৈরির কারিগররা।
ভাদ্র-আশ্বিনের ভয়াবহ খরতাপে হেমন্তের শেষ মূহূর্তে আগাম শীতের বার্তায় এ মহাউৎসবকে উৎসব মুখোর করে তুলতে দু’উপজেলার বিশেষ সম্প্রদায় অধ্যুষিত এলাকার মন্দিরগুলোতে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। আগামী ২৫শে সেপ্টেম্বর ঘট পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে শারদীয় দূর্গাপূজার এ মহোৎসব ।
লাকসাম পৌরশহরের সদর কালিবাড়ী, উত্তর বাজার বনিক্য বাড়ী, জগন্নাথ দেবালয়, দক্ষিণ লাকসাম স্বর্গীয় নিরঞ্জন বনিকের বাড়ী, ধামৈচা, পশ্চিমগাঁও সাহাপাড়াসহ উপজেলা দুটোর বিভিন্ন দূর্গামন্দিরে স্থানীয় ও দেশ- বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত মৃৎ শিল্পীরা রাত-দিন প্রতিমা তৈরীর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এলাকার পাড়া-মহল্লায় এবং বাসা- বাড়ীতে পারিবারিক পূজা মন্ডপে হরেক রকম প্রতিমা তৈরী করছেন কারিগররা। শারদীয় এ মহা উৎসবের এক-একটি আধুনিক প্রতিমা তৈরী করতে কেউ কেউ ব্যয় করছেন কয়েক লাখ টাকা। এবারে লাকসাম উপজেলায় ৩৪টি পূজা মন্দিরে দূর্গা উৎসব পালিত হবে। আসন্ন এ দূর্গা পূজা ঘিরে সরকার নির্দেশনা জারি করার পাশা-পাশি উপজেলা – পৌরসভা ও থানা পুলিশ প্রশাসন পৃথক পৃথক ভাবে শান্তি শৃংখলা রক্ষার্থে নিয়েছেবিশেষ ব্যবস্থা।
লাকসাম দৌলতগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও হিন্দু ধর্মীয় নেতা বাবু পিন্টু সাহা জানায়, অশুভ শক্তি কিংবা অসুর শক্তি বিনাশ ঘটিয়ে শুভ সুর শক্তি প্রতিষ্ঠা করাই এ শারদীয় দূর্গা পূজার মূল দর্শন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে এবং জনজীবনে সকল ভেদা-ভেদ ভুলে সার্বজনীন এ মিলন মেলাই শারদীয় মহা উৎসবের নামকরন। এ অঞ্চলের স্থানীয় প্রশাসনসহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকজনের সাবির্ক সহযোগিতা ও আন্তরিকতায় আমরা শান্তিপূর্ন ভাবে সব ধরনের পূজা উদযাপন করতে পারছি। আমাদের সকল অনুষ্ঠানে সার্বজনিন লোকজন উপস্থিত থাকেন। বিশেষ করে আমরা সকল ধর্মের লোকজন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধনে এ অঞ্চলে বসবাস করছি।
শহরের পৌর এলাকার একাধিক দূর্গা মন্দিরের প্রতীমা কারিগররা জানায়, আসন্ন শারদীয় দূর্গা পূজা ঘিরে হরেক রকম ডিজাইন ও কারুকাজসহ প্রতিমার সমাপনী কাজ সারতে সময় লাগে প্রায় ৩ থেকে সাড়ে ৩ মাস। বছরের বেশির ভাগ সময় তারা বিভিন্ন প্রতিমা তৈরীর কাজে ব্যস্ত থাকেন। বাপ-দাদার পেশা হিসাবে দীর্ঘ ৪০ বছর এ কর্মজীবনের অনেক অজানা তথ্য এ প্রতিনিধির কাছে তুলে ধরেন প্রতিমা তৈরির কারিগররা। তাদের পৈত্রিক বাড়ী শরিয়তপুর,চাঁদপুর, ফরিদপুর ও নোয়াখালি জেলায়। চলতি বছরের আষাঢ় মাস থেকে বিভিন্ন দূর্গা মন্দিরের জন্য দূর্গা প্রতিমার কাজ চুক্তিভিত্তিক শুরু করেন এবং কাজ শেষ হবে আগামী সাত/আট দিনের মধ্যে।
তারা আরও জানায়, এ অঞ্চলের শারদীয় মহা উৎসবে দূর্গা প্রতিমা তৈরীতে খড়-কুটা, পাট, সূতা, বাঁশ, রশি ও মাটিসহ বিভিন্ন কাঁচামাল দিয়ে দূর্গা প্রতিমার কাঠামো তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন শুধু প্রতিমায় মাটি আস্তর শুকালে রংয়ের ডিজাইন ও কারুকাজ শুরু করবো। কোন কোন ক্ষেত্রে তারা ছোট প্রতিমা ৫০০ টাকা থেকে ৭/৮’শ টাকা এবং বড় প্রতিমাগুলো ৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রতিমা তৈরির মুজুরী হিসাবে পারিশ্রমিক নিয়ে থাকেন এবং ফাঁকে ফাঁকে চুক্তির মাধ্যমে নানা রকম সাইজের প্রতিমা বিক্রিও করেন।
লাকসাম উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা: সচীন্দ্র কুমার দাস ও সাধারণ সম্পাদক বাবু দূর্জয় সাহা জানায়, আসন্ন শারদীয় দূর্গা পূজার এ মহা উৎসব করোনা ভাইরাসের কারনে গত ২ বছর অনেকাটাই সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্য বিধি মেনে পালন করা হয়েছে। তবে এ বছর অনেকটা জাকজমক পূর্ন পরিসরে পালিত হবে। দূর্গা প্রতিমা তৈরী অনেকটা ব্যয় বহুল হলেও ইতিমধ্যে এ সকল আয়োজন প্রায় সম্পন্নের পথে। এ অঞ্চলে আবহমান কাল ধরে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বিপুল উৎসাহ- উদ্দীপনা ও উৎসব মুখর পরিবেশে এ দূর্গা পূজার মহোৎসব পালন করে আসছেন।
এ এলাকার সার্বজনীন লোকজন পারস্পরিক সহমর্মিতা ও ঐক্য সৃষ্টিতে এ মহা উৎসব গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালনের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠবে এ অঞ্চলের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্বল দৃষ্টান্ত। আমি আশা করছি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রেখে দেশ ও জাতির কল্যানে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবদান রাখবে।