কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া): বিএনপির প্রার্থী নিয়ে প্রশ্ন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা |বিএনপি’র কেমন প্রার্থী চান জনগণ?
ফজলুল হক জয় ||
কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) আসন নিয়ে আবারও আলোচনায় রয়েছে বিএনপি। দলটির রাজনৈতিক ইতিহাস, সাংগঠনিক অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া এবং আসন্ন নির্বাচনের কৌশল বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে—এই আসনে প্রার্থী নির্বাচন ঘিরে এক ধরনের অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা দীর্ঘদিন ধরেই বিদ্যমান।২০২৪-এর পট পরিবর্তনে তারুণ্যনির্ভর নেতৃত্ব ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে প্রয়োজন একজন সাহসী, দূরদর্শী ও জনপ্রিয় প্রতিনিধির।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এর হাতে গড়া একটি জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল বিএনপি।অতীত বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই দল গণমানুষের অধিকার ও জাতীয় স্বার্থে বহুবার আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছে। ১৯৯০-এর গণআন্দোলনের মাধ্যমে সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পতনের পর দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে অনেক পরিবর্তন এলেও, কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রাপ্তদের ধারাবাহিকতায় কিছু প্রশ্ন ও পর্যবেক্ষণের অবকাশ রয়েছে।
জুলাই-আগষ্ট ২০২৪ এর পট পরিবর্তনে তারুণ্যনির্ভর স্বপ্নের বাস্তবায়নে প্রয়োজন আকাঙ্ক্ষা পূরণের যোগ্য বাহক।
বাংলাদেশের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য চারটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিশ্লেষণে দেখা যায়, কুমিল্লা-৫ আসনে বিএনপি এক ধরনের অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তায় ভুগছে—এর মূল কারণ দলীয়ভাবে সুসংগঠিত, জনপ্রিয় ও নির্বাচনীভাবে শক্তিশালী প্রার্থীর অভাব।
নির্বাচনভিত্তিক সংক্ষিপ্তভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়,
১৯৯১ সালে, বহিরাগত প্রার্থী আবুল কাশেম বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগের আবদুল মতিন খসরুর কাছে পরাজিত হন।
১৯৯৬ সালে, নতুন প্রার্থী আবদুল লতিফ ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করলেও একই পরিণতি বরণ করেন—আবারও আবদুল মতিন খসরু বিজয়ী হন।
২০০১ সালের নির্বাচনে, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত এবং জাতীয় পার্টি থেকে বিএনপিতে যোগদানকারী অধ্যাপক ইউনুস বিএনপির টিকিটে নির্বাচন করে অবশেষে আবদুল মতিন খসরুকে পরাজিত করেন। এটাই ছিল একমাত্র জয়।
২০০৮ সালে, বিএনপি আবার প্রার্থী পরিবর্তন করে এস. এম. আলাউদ্দিন ভূইয়াকে মনোনয়ন দিলে তিনি নির্বাচনে পরাজিত হন।
এই ধারাবাহিক বিশ্লেষণে একটি বিষয় পরিষ্কারভাবে প্রতিফলিত হয়:
কুমিল্লা-৫ আসনে দীর্ঘমেয়াদী ও সুপরিচিত, গ্রহণযোগ্য কোনো প্রার্থী গড়ে তুলতে বিএনপি ব্যর্থ হয়েছে। প্রতিবারই নতুন মুখ এনে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার চেষ্টা করেছে দলটি। ফলে মনোনয়নপ্রাপ্তদের সাথে ভোটারদের সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি, যা নির্বাচনে পরাজয়ের অন্যতম প্রধান কারণ।
সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে—বিএনপি এককভাবে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। যদিও বাস্তবিক প্রেক্ষাপটে জোটগত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে শরিকদের আসন ছাড় দিতে হতে পারে। সেই হিসাব-নিকাশে কুমিল্লা-৫ আসনটি শরিক দলের জন্য সংরক্ষিত হতে পারে, অথবা এমন কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে, যার নাম এই মুহূর্তে রাজনীতির আলোচনায় নেই।
এই আসনে যোগ্য, পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তিসম্পন্ন ও ভোটারদের সাথে সংযোগ রাখতে পারবে—এমন প্রার্থীই যদি এবার বিএনপি মনোনয়ন দেয়, তবে দীর্ঘদিনের হারের ধারাবাহিকতা ভাঙার সুযোগ তৈরি হতে পারে।
এ আসনটির নির্বাচনী মাঠ জরিপে পাওয়া তথ্য মতে,
এই অঞ্চলের জনগণও চান একজন স্থায়ী, স্থানীয় ও অভিজ্ঞ নেতৃত্ব, যিনি শুধু নির্বাচনকালীন নেতা নন, বরং তাদের সুখ-দুঃখের অংশীদার হয়ে এলাকায় কাজ করে যাবেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তৃণমূল বিএনপি’র অধিকাংশ নেতাকর্মীরা মতামত প্রকাশ করেন,বিএনপির উচিত হবে এবার আর “পরীক্ষামূলক” প্রার্থী নয়, বরং জনসাধারণের সঙ্গে মিশে থাকা একজন যোগ্য ও দূরদর্শী নেতৃত্বকে তুলে ধরা।
নির্বাচনের বিষয়ে অনুসন্ধানের ভিত্তিতে পাওয়া তথ্য মতে,কুমিল্লা-৫ আসনে বিএনপি বারবার প্রার্থী পরিবর্তন এবং তাতে ব্যর্থতার যে ইতিহাস, তা থেকে দলটি শিক্ষা নেবে বলেই সাধারণ সমর্থক ও নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা। বিএনপি যদি বাস্তবতা বুঝে সঠিক প্রার্থী নির্ধারণ করতে পারে তবে এই আসনে আবারও তাদের জয়ের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হতে পারে বলে মতামত প্রকাশ করেছেন দলটির নবীন ও প্রবীণ অনেক সমর্থক এবং বিশেষজ্ঞগণ।