হালিম সৈকত, কুমিল্লা।।
কুমিল্লার তিতাস উপজেলার ভিটিকান্দি ইউনিয়নে ভূমিহীনদের বন্দোবস্ত দেওয়া সরকারি খাস খতিয়ান এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন ফসলি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করে চলেছে প্রভাবশালী একটি মহল।
সরকারি ভূমি আইনের নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে জোরপূর্বক প্রান্তিক কৃষকদের উপর চাপ প্রয়োগ করে ও নগদ টাকার প্রলোভন দেখিয়ে জমির মালিক ও দখলদার ব্যক্তিদের সম্মতিক্রমে বেআইনিভাবে সরকারি খাস ও মালিকানাধীন জমির মাটি বিক্রি করে চলেছে ইটভাটায় এ মহলটি। প্রশাসনের চোখের সামনে এ অনিয়ম হলেও তারা অজানা কারনে নির্বিকার বলে অভিযোগ সাধারণ মানুষের।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রশাসন নিরব থাকায় ভূমি আইন অমান্য করে ফসলি জমির মাটি বিক্রির মহোৎসবে মেতেছে এ প্রভাবশালী মহল। উপজেলা ভূমি অফিসের নাজির মিজানুর রহমান এর তথ্য অনুযায়ী ২০২০ সালে ইউনিয়নের ৬৩ নং জোয়ার গোবিন্দপুর মৌজায় দাড়িকান্দি চরে সরকারি ভাবে ভূমিহীন পরিবারের মাঝে ৫০ শতাংশ ফসলি জমি বন্দোবস্ত দেওয়া হয় এসব জমির দলিতরা ও পাশ্ববর্তী ব্যক্তি মালিকানাধীন ফসলি জমির মালিকেরা স্থানীয় প্রভাবশালী এ মহল দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নগদ টাকার বিনিময়ে অবৈধ ভ্যাকুমেশিন দিয়ে ফসলি জমি ৫/৭ ফুট খনন করে মাটি বিক্রি করছে পাশ্ববর্তী ইটভাটা এম.এম.বি/এম.এম.বি.এস বিক্সসে। আনুমানিক সরকারি খাস ও ব্যক্তি মালিকানাধীনসহ মোট ১ একর ফসলি জমির মাটি ভ্যাকু মেশিন দিয়ে খনন করে পাশ্ববর্তী এই ইটভাটায় বিক্রি হয়েছে বলে জানা গেছে। মাটি কেনাবেচায় আপাত লাভবান হলেও ক্ষতির মুখে পড়ছে জমির উর্বরতা শক্তি। এছাড়া মাটি কেটে নেওয়ার ফলে জমি নিচু হয়ে পড়ায় চাষাবাদে বিঘ্ন ঘটনার ঘটনাও ঘটছে। এতে করে আবাদ করা জমির পরিমাণও কমে যাচ্ছে এবং পাশ্ববর্তী অন্যান্য কৃষি ফসলি জমিও রয়েছে ভেঙ্গে যাওয়ার ঝুঁকির মুখে।
দড়িকান্দি চরে সরকারি খাস খতিয়ান ১৫ শতাংশ ফসলি জমি ভূমিহীন হিসেবে বন্দোবস্ত পাওয়া মালিক দুলারামপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল্লাহ শহিদ ও তার পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায়, ভূমিহীন হিসেবে সরকারের কাছ থেকে আমার পরিবার দড়িকান্দি চরে ১৫ শতাংশ জায়গা পেয়েছে এই জমি বন্দোবস্ত পাওয়ার পর উপজেলা থেকে ভূমি অফিসার এসে আমাদের কে জায়গা বুঝিয়ে দিয়ে যায়৷ হঠাৎ একদিন আমাদের কাছে খবর আসলো আমাদের জমির পাশ্ববর্তী জমির মালিকরা ওনারদের জমির মাটি খনন করে বিক্রি করছে ইটভাটায়। তখন আমরা খোঁজ নিয়ে দেখি বিষয়টি সত্য পরে বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করি কিন্তু কোন রকম ব্যাবস্থা গ্রহণ করতে দেখিনি পরে জানতে পারলাম উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই নাকি এই মাটি খননের কাজ চলছে। তখন আমারা অর্থনৈতিক ভাবে সমস্যায় থাকার কারণে ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ না থাকায় এক পর্যায় স্থানীয় সিন্ডিকেটের চাপে প্রভাবিত হয়ে ইটভাটার মালিকের সাথে যোগাযোগ করে মাটি বিক্রি করি এবং মাটি বিক্রি বাবদ এ পর্যন্ত ইট ভাটার মালিকের কাছ থেকে ৯৭ হাজার টাকা এনেছি। এ কাজটি করা আমাদের ঠিক হয়নি এটা আমারা অপরাধ করেছি এখন অপরাধ যেহেতু করেই ফেলেছি আইন অনুযায়ী যা হওয়ার হবে আমার এবিষয়ে আর কিছু বলার নেই।
এ বিষয়ে ইটভাটার মালিক শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি কারোও উপর চাপ প্রয়োগ করে মাটি কিনি নাই আর কোনটা সরকারি খাসের জায়গা কোনটা মালিকানা জায়গা আমি জানি না স্থানীয় জমির মালিকরা মাটি স্বেচ্ছায় টাকার বিনিময়ে আমার কাছে মাটি বিক্রি করেছে আমি নগদ টাকা দিয়ে কিনে রেখেছি আর মাটি কাটার বিষয়ে জমির মালিকেরা স্থানীয় মাটি ব্যবসার সাথে জড়িত এমন ব্যক্তিবর্গের সাথে আলোচনা করে ভ্যাকু মেশিন দিয়ে খনন করার কাজটি ঠিক করে দিয়েছে তারা মাটি আমার ভাটায় আনলে আমি সেটা শুধুমাত্র কিনে রাখছি।
এ বিষয়ে তিতাস উপজেলা নির্বাহী অফিসার
এটিএম মোর্শেদ বলেন, আমি এ বিষয়ে আগে অবগত ছিলাম না আজ প্রথম শুনলাম আপনাদের কাছে। আর ভূমিহীন পরিবারের মাঝে বন্দোবস্ত পাওয়া জমি ও ফসলি জমির মাটি খনন করে যদি কেউ বিক্রি করে থাকে তাহলে সেটা অবশ্যই ভূমি আইন অমান্য করছে। আপনারা বিষয়টি সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশিক-উর-রহমান এর সাথে কথা বলুন তিনি আমাকে বিষয়টি ক্লিয়ার করলে আমি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশিক-উর-রহমান এর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তাকে না পেয়ে উপজেলা ইউএনও এর কাছে গেলে তিনি জানান, দেবিদ্বার উপজেলার এসিল্যান্ড ট্রেনিং এ থাকায় তিনি সেখানে ডিউটিরত অবস্থায় আছেন। তিনি সপ্তাহে সেখানে দুইদিন ডিউটি করেন। পরে এসিল্যান্ড কে উপজেলায় উপস্থিত না পেয়ে স্থানীয় সাংবাদিকগন মুঠোফোনের মাধ্যমে কয়েকদিন কল দিয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি রেসপন্স করেননি। এরকম বেআইনীভাবে ফসলি জমির মাটি খনন করার তথ্য পেয়েও উপজেলা প্রশাসনের দ্রুত কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে না দেখে এবং নিউজ প্রকাশের জন্য সাংবাদিকদের কাছে সুনির্দিষ্ট কোন বক্তব্য প্রকাশ করে সহযোগিতা না করায় স্থানীয় সাংবাদিকদের মনে প্রশ্ন উঠেছে উপজেলার এসিল্যান্ড মহোদয় নিজেকে আড়াল করে রাখছেন কিনা?
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে এরকম বেআইনিভাবে ফসলি জমির মাটি খননের ভিডিও চিত্র ভাইরাল হলে সুশীল সমাজে নানান আলোচনা সমালোচনার ঝড় তৈরি হয়েছে বলেও তথ্য রয়েছে।