দেবব্রত পাল বাপ্পী, লাকসাম।।
কুমিল্লা দক্ষিনাঞ্চলের ৫টি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সরকারী নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র গড়ে উঠা প্রায় অর্ধশতাধিক ইটভাটা গিলে খাচ্ছে কয়েক হাজার একর আবাদি কৃষি জমি। এছাড়া ওইসব ইট-ভাটার কালো ধোয়া ও বায়ু দূষনে এ অঞ্চলের পরিবেশ মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে। বাৎসরিক সরকারী রাজস্ব ফাঁকি দিলেও ইটভাটা মালিকদের পকেট ভারী হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। বিশেষ করে জেলা দক্ষিনাঞ্চলের সবকটি উপজেলায় অবৈধ ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় পুড়ছে কৃষকদের হাজার হাজার একর ফসল। চলমান পৌষ মাসের শীতকাল শেষ পর্যায়ে ইটভাটা মালিকদের দৌরাত্ব কমছে না। কৃষকদের জমির মাটি যাচ্ছে অহরহ ইট ভাটায়।
জানা যায়, লাকসামে ৮টি ও মনোহরগঞ্জে ৬টি, নাঙ্গলকোটে ১৯টি, বরুড়ায় ৯টি ও সদর দক্ষিন ও লালমাই উপজেলায় ১১টি ইটভাটায় সরকারী বিধি-বিধান না মেনে পুরোদমে ইট তৈরী করছেন ভাটার মালিককরা। ইটভাটা স্থাপনে পরিবেশ,বনবিভাগ ও কৃষি বিভাগের প্রয়োজনীয়
কাগজপত্রের নির্দেশনা অনুযায়ী হাইব্রিড হফম্যান, জিগ-জ্যাগ, ভার্টিক্যাল শ্যাফট কিলন কিংবা বিএসটিআই পরীক্ষিত নতুন প্রযুক্তির এলাকায় পরিবেশ বান্ধবসহ সরকারী অন্যান্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রয়োজনীয় অনুমতি প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর বাৎসরিক হালনাগাদ ছাড়পত্র কিংবা প্রত্যায়নপত্র না নিয়েই ইটভাটাগুলো বিনা বাধায় অবাধে ইট উৎপাদন করে চলেছে। গতবছরের চেয়ে বর্তমানে ইটের বাজার মূল্য উর্ধ্বমুখী। সরকারী রাজস্ব ফাঁকি এবং রহস্যজনক কারনে ইটের মূল্য বৃদ্ধির অন্তরালে তদন্ত চালালে অনেক অজানা রহস্য বের হয়ে আসবে বলে অভিমত এলাকাবাসীর।
সূত্রগুলো আরও জানায়, সরকারী নীতিমালা অমান্য করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই গায়ের জোরে নিজেদের খেয়ালখুশি মত ইটভাটা স্থাপন করে ইট পুড়িয়ে এ অবৈধ ব্যবসা চালাচ্ছে ভাটার মালিকরা। ইট ভাটার বিরুদ্ধে বিভাগীয় পরিবেশ দপ্তর মাঝে মধ্যে ২/১টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করলেও স্থানীয় প্রশাসন কোন ভূমিকা রাখতে দেখা যায় নি। অথচ পরিবেশ সংরক্ষন আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) এর ১২ ও ৪ এর ২/৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আবাদী কৃষি জমি, পরিবেশ সংকটাপন্ন ও জনবসতি এলাকা এবং আশেপাশে ইটভাটা স্থাপন করা দন্ডনীয় অপরাধ। আবার ২/১টি ছাড়া অনেকের প্রয়োজণীয় কাগজপত্র ও ইটতৈরীর উন্নত ও বৈজ্ঞানিক জ্ঞানসহ পরীক্ষিত কোন সরঞ্জাম নেই বললেই চলে। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ এলাকা থেকে কমপক্ষে ১ কিঃ মিঃ ও এলজিইডি নির্মিত সড়কের আধা কিঃ মিটারের মধ্যে কোন ইটভাটা হতে পারবে না। বিশেষ করে নিষিদ্ধ এলাকায় হিসাবে আবাসিক, সংরক্ষিত ও বানিজ্যিক এলাকা, পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা, কৃষি আবাদী জমি, বন ও বাগানকে বুঝানো হয়েছে।
এ বিষয়ে একাধিক ইটভাটার মালিক জানায়, আমরা নিয়ম মাফিক ভাবে এবং স্থানীয় প্রশাসনসহ বিশেষ বিশেষ মহলকে ম্যানেজ করে ইট-ভাটা চালাচ্ছি। পত্রিকায় লেখালেখি করলে কিছুই হবেনা। নীচতলা থেকে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উপর তলা পর্যন্ত আমাদের ঠিকরাখা আছে।