দেবব্রত পাল বাপ্পী, কুমিল্লা
কুমিল্লা দক্ষিনাঞ্চলের লাকসাম, লালমাই, নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জ উপজেলা জুড়ে হরেক রকম সিন্ডিকেট আর ভেজাল ঔষধে ভরে গেছে
গ্রামীন হাট-বাজার এবং স্বাস্থ্যসনদ বিহীন রমরমা ঔষধের ব্যবসায় প্রতারনার শিকার এ অঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষ।
এ অঞ্চলে চলমান করোনা মহামারীর ধাক্কায় প্রায় সকল খাতের অবস্থা বেহাল হলেও ভিন্ন চিত্র ঔষধ ব্যবসার ক্ষেত্রে।
মহামারী করোনার পর নানা অজুহাতে অধিক মুনাফা করেছে অধিকাংশ ঔষধ কোম্পানী -স্থানীয় ফার্মেসী মালিককরা। শহর থেকে গ্রাম-গঞ্জের ফার্মেসীগুলোতে ভেজাল, মেয়াদউর্ত্তীণ, নিম্নমান ও জেলার সীমান্ত পথে চোরাই ভাবে আসা ভারতীয় নিষিদ্ধ হরেক রকম ঔষধে সয়লাব হয়ে গেছে ফলে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে সাধারন মানুষ।বিশেষ করে সম্প্রতি নানান ব্রান্ডের ঔষধ সংকট, পল্লী চিকিৎসকদের চিকিৎসার নামে প্রতারনা ও ঔষধের অগ্নিমূল্য আবারো অস্থির হয়ে উঠেছে ঔষধের বাজার। এতে মহাসংকটে পড়েছে ভুক্তভোগীরা।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, জেলা দক্ষিনাঞ্চলের ৪টি উপজেলার হাট-বাজারগুলোতে ব্যাঙের ছাতার মত প্রাইভেট ক্লিনিক ও যত্রতত্র ঔষধের দোকান গড়ে উঠেছে। তার মধ্যে ৯০ ভাগ ঔষধের দোকানের কোন বৈধ কাগজপত্র নেই। ঔষধ সংকট, আধুনিক বা প্রযুক্তিগত চিকিৎসা সরঞ্জাম নেই।
স্থাণীয় লোকজন আরও জানায়, এ অঞ্চলের চিকিৎসাসেবা মূলত চোরাচালান ও অসামাজিক কার্যকলাপ বৃদ্ধির কারনে অবৈধ এমআর, ডিএনসি ও অবৈধ চিকিৎসা কর্মকান্ডের দরুন সু-চিকিৎসা না পেয়ে শহরমুখী হচ্ছেন মানুষ। এ অঞ্চলে এক শ্রেনীর অসাধু ঔষধ পাইকারী বিক্রেতারা বেশী লাভে ভেজাল ও নিম্নমানের ঔষধ গ্রাম-গঞ্জের ফার্মেসী ও হাতুড়ে পল্লী চিকিৎসকের মাধ্যমে বাজারজাত করে চলেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবে ঔষধের দাম নিয়ে নানাহ কমিশন বানিজ্যে চলছে সীমাহীন নৈরাজ্য। এতে প্রতারনার শিকার হচ্ছেন ভোক্তারা। ওইসব দোকানীরা জীবনরক্ষাকারী ঔষধের মূল্য প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি করার সুযোগে নকল, ভেজাল ও নিষিদ্ধ ঔষধে বাজার সয়লাব হয়ে পড়ায় ওইসব ঔষধ ব্যবহার করে মানুষ পড়ছেন স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। এ অঞ্চলে পল্লী চিকিৎসক সমিতি, ড্রাগিষ্ট এন্ড ক্যামিষ্ট সমিতি, ঔষধ দোকান মালিক সমিতিসহ রয়েছে হরেক রকম সাইনবোর্ড সর্বস্ব ঔষধ ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রনকারী সংস্থা। তারপরও এ অঞ্চলে হাতেগোনা কয়েকজন ফার্মাসিষ্ট, পল্লী চিকিৎসক, ডিপ্লোমাধারী চিকিৎসক ছাড়া বেশির ভাগই ঔষধ প্রশাসনের নিবন্ধনবিহীন শত শত ঔষধের দোকানে চলছে রমরমা ভেজাল ঔষধের বানিজ্যের নামে নৈরাজ্য। বিশেষ করে ওইসব সমিতির নামে কয়েকদিনের চিকিৎসা প্রশিক্ষন নিয়ে রাতারাতি অনেকেই গ্রাম্য ডাক্তার সেজে বসে গেছেন এ পেশায়। মূলত ওইসব চিকিৎসাবিদদের কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি কিংবা স্বাস্থ্যমন্ত্রনালয়ের কোন অনুমোদন নেই।
জেলা দক্ষিনাঞ্চলের বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জানা যায়, এ অঞ্চলে একই ঔষধ ভিন্ন ভিন্ন কোম্পানী থেকে বিভিন্ন নামে বাজারে আসছে তেমনি এসব ঔষধের গুনাগুনেও ভিন্নতা রয়েছে। সকল ঔষধই একই মানের নয় আবার শহর এলাকায় যেসব ঔষধ পাওয়া যায় গ্রামাঞ্চলে সেগুলো পাওয়া যায় না। দেশে প্রচলিত প্রায় ২৩ হাজার ঔষধের মধ্যে ১১৭টি নমুনার গুনাগুন, মান নির্নয় ও মূল্য নির্ধারনে সরকারের হস্তক্ষেপ রয়েছে। ইতিমধ্যে আবার ৫২টি নামের ঔষধের মূল্য বৃদ্ধির চিন্তাভাবনা চলছে। কিন্তু বাকী সবগুলো ঔষধের নিয়ন্ত্রন করছেন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে বাজারে বিক্রিকালে কোন কোন সময় ঔষধের দাম হঠাৎ করে বাড়িয়ে দেন ওইসব উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি বিদেশ থেকে হরেক রকম ঔষধ কিংবা ফুড সাপ্লিমেন্ট নামে আমদানী করা পন্য নিয়ে রয়েছে হাজারো বির্তক। এ অঞ্চলের স্থানীয় প্রশাসন মাঝে মধ্যে বাজার মনিটরিং এবং ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করলেও টনক নড়ছে না স্বাস্থ্যদপ্তর কিংবা ঔষধ প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।
স্থানীয় বেসরকারী হাসপাতালের চিকিৎসবোর্ডের একাধিক সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত বিভিন্ন ল্যাবরোটরীতে দেশীয় উৎপাদিত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এনার্জী ড্রিংকস্গুলোর নমুনা পরীক্ষায় বের হয়ে আসে লোমহর্ষক চিত্র। বেশির ভাগ কোল্ডড্রিংকস্ এ রয়েছে মাত্রাতিরিক্ত সোডিয়াম বেনজোয়েট, ইথানল, ক্যাপেইন ও বিষাক্ত সেগারিনসহ হরেক রকম রাসায়নিক দ্রব্য। অথচ সেগুলো পান করে মানুষের কিডনী, মস্তিস্ক ও মৃগীরোগের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে অস্তঃস্বত্তা মা- সন্তানসহ নানাহ জটিলরোগে আক্রান্তের ঝুঁকি বেড়ে যায় সকল মানুষের। এ অঞ্চলে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করনে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, জেলা ড্রাগ সুপার ও সিভিল সার্জনের দায়িত্ব অতি মূখ্য হলেও রহস্যজনক কারনে তারা নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। অথচ ওইসব নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধি। স্থাণীয় চিকিৎসক, পল্লী চিকিৎসক ও বিভিন্ন ঔষধ দোকানদারদের সাথে স্থানীয় সরকারি- বেসরকারী প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোর কমিশন বানিজ্য জমে উঠেছে। এছাড়া বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধি গুলোর সাথে চিকিসৎকদের গিভ এন্ড টেইক পদ্ধতিতে ওইসব ভেজাল ও নিম্নমানের ঔষধ বাজারজাত করনে হাতুড়ে ডাক্তার ও ঔষধের দোকান মালিকদের সাথে মোটা অংকের ব্যবসায়ী কমিশন কাজ করছে বলে এলাকার জনমনে অভিযোগ।
সূত্রগুলো আরও জানায়, ঔষধ এমন একটি পন্য যা সরাসরি মানুষের জীবন-মরনের সাথে জড়িত। স্থানীয় দোকানীরা অধিক মুনাফার লোভে জীবন রক্ষাকারী ভেজাল ও নিম্নমানের হরেক রকম ঔষধ বেচাকেনা করছে। যাদের দায়িত্বহীনতার কারনে জনস্বাস্থ্য পরিপন্থি ঔইসব ঔষধ প্রস্তুত কিংবা বাজারজাত করা হয়েছে তাদের মাধ্যমেই বাজার থেকে সেগুলো উঠিয়ে নেয়া অতিমূখ্য কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রশাসন যেন ঘুমিয়ে আছে। শুধু এটুকু বলতে চাই সুস্থ্যভাবে বাঁচতে হলে মানসম্মত ঔষধ ও ভেজালমুক্ত ভোগ্যপন্য ব্যবহারের কোন বিকল্প নেই। স্থানীয় সংশ্লিষ্ট প্রশাসন আন্তরিক হলেই কেবল ওইসব অসাধু ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা রোধ করা সম্ভব বলে অভিমত তাদের।
এ ব্যাপারে জেলা-উপজেলার স্বাস্থ্য দপ্তর কর্মকর্তাদের মুঠোফোনে বার বার চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।