“নারীর সম্ভ্রম বাঁচাতে গিয়ে আমার ছেলে খুন হয়
এখন খুনিদের ভয়ে থাকি-বাড়ির বাইরে যেতে পারি না ” সংবাদ স্মমেলনে আহাজারি করে বলেন নিহত এজাজের মা রানু বেগম
ফজলুল হক জয়,কুমিল্লা।
আমার ছেলে কবুতর পালতো, যারা নিরক্ষর থাকতো তাদেরকে অক্ষর জ্ঞান শেখাতে কাজ করতো। এক নারীর সম্ভ্রম বাঁচাতে যাওয়া আমার সেই ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আজ খুনিদের ভয়ে আমার অন্য ছেলে মেয়েরা বাড়ির বাইরে যেতে ভয় পায়। আমার ছেলের খুনের বিচার কি পাবো না, আমরা কি স্বস্তিতে ঘরে বাইরে যেতে পারবো না ?
বুধবার কুমিল্লা হাউজিং স্টেট বখসিয়া মসজিদ এলাকায় নিজের বাড়িতে সংবাদ সম্মেলনে ছেলে এজাজ আহমেদের খুনিদের বিচার চেয়ে আহাজারি করেন মা রানু বেগম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রানু বেগমের ছেলে মোঃ শাহাজাদা জিসান, জসিম উদ্দিন, মেয়ে সাহিরা বেগম ও প্রতিবেশী সানজিদা আক্তার মুন্নি।
সংবাদ সম্মেলনে রানু বেগম বলেন, ২০১৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারী পাশের বাড়ির সানজিদা আক্তার মুন্নির সাথে তার স্বামী দুলাল হোসেনের সাথে দাম্পাত্য কলহ হয়। সেদিন দুলাল তার ভাড়া করা লোক দিয়ে মুন্নিকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় মুন্নিকে প্রায় বিবস্ত্র করে দুলাল ও তার লোকজন। আমার ছেলে এজাজ এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে দুলাল তার লোকজনকে ডেকে এনে বাড়ির সামনে আমার ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা করে।
এ ঘটনায় আমরা বড় ছেলে মোঃ শাহাজাদা জিসান বাদি হয়ে ৫ জনের নামোল্লেখ করে কোতয়ালী মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলার প্রধান আসামী নূরপুর এলাকার মাতু মিয়ার ছেলে মোঃ পলাশ। এ ঘটনার অন্য আসামীরা হলেন নুরপুর এলাকার ইকবাল, আকাশ, আমিনুল ইসলাম দুলাল ও মোঃ দুলাল।
সংবাদ সম্মেলনে মা রানু বেগম বলেন, আমার ছেলের খুনের প্রধান আসামী পলাশ শুধু আমার ছেলেকেই নয় আরো দুই যুবককে বুকে পিস্তল ঠেকিয়ে হত্যা করে। তার বিরুদ্ধে কোতয়ালী থানায় তিনটি খুনসহ একাধিক মামলা রয়েছে। এখন সে কারাগারে আছে। তবে তার সাঙ্গপাঙ্গরা প্রতিনিয়ত আমার পরিবারের লোকজনকে হুমকি ধমকি দিচ্ছে। পলাশ জানিয়েছে সে জেল থেকে জামিনে বেরিয়ে আমার পরিবারকে দেখে নিবে। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই, স্বাধীন এই দেশে আমার পরিবার নিয়ে স্বস্তিতে বাঁচতে চাই।
নিহত এজাজের বড় ভাই জিসান জানান, আমার ভাইয়ের খুনের মামলার প্রধান আসামী পলাশ তিন বছর পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে হাউজিং এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কয়েম করেছিলো। মাদক ব্যবসা, মাদক সেবন , চাঁদাবাজি, ডাকাতি এমন কোন অপরাধ নাই যা পলাশ করতো না। পলাশের ভয়ে তটস্থ পুরো হাউজিং ও নুরপুর এলাকা। এইসব অপরাধের পাশাপাশি পলাশ নিয়মিত টিকটক করতে।
এ বছর ৩০ জুন আদালতে আত্মসমর্পণ করে পলাশ। আমাদেরকে হুমকি দিয়ে পলাশ জানিয়েছে সে আত্মসমর্পণ করেছে শুধু মাত্র হাইকোর্ট থেকে জামিন নেয়ার জন্য। জামিন নিতে পারলে আবারো আমাদের পরিবারের কাউকে খুন করে বিদেশ চলে যাবে। আমরা এখন ভয়ে ভয়ে থাকি।
এদিকে গত ২০২০ সালের ৮ মার্চ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) পরিদর্শক মতিউর রহমান এ মামলার এর এজাজ হত্যা মামলার ৫ জন আসামীর বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। এদিকে এজাজ খুনের ৫ জন আসামীর মধ্যে চলতি বছর দুলাল হোসেন স্ট্রোক করে মারা যান।
এ মামলার অন্য আসামী আমিনুল ইসলাম দুলাল ও ইকবাল হোসেন এখন জামিনে আছেন। তারাই প্রতিনিয়ত মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি ধমকী দিচ্ছেন।
এ ঘটনায় কোতয়ালী মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন নিহত এজাজের বড় ভাই মোঃ শাহাজাদা জিসান।