১৪ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ| ২৯শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ| ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি| ভোর ৫:৩৮| হেমন্তকাল|
শিরোনাম:
কুমিল্লায় কৃষকদের মাঝে ধানের বীজ ও কৃষি উপকরণ বিতরণ কুমিল্লায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে নগদ অর্থ ও কৃষি প্রণোদনা বিতরণ বুড়িচংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় খণ্ড-বিখন্ড ৭ অটো রিকশা যাত্রী;আহত ২ কুমিল্লায় সদর দক্ষিণের ইউএনও’র সাথে মোতায়াল্লী সমিতির মত বিনিময় বরুড়ায় UNO’র সাথে মোতায়াল্লী সমিতির মত বিনিময় মনোহরগঞ্জের মৈশাতুয়ায় বিএনপির কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত বিএনপি ক্ষমতায় আসলে শিক্ষকদের সমস্যার সমাধান হবে- নাঙ্গলকোটে শিক্ষক সমাবেশে সেলিম ভূঁইয়া কুমিল্লায় জিয়া গবেষণা পরিষদ মহানগর শাখার উদ্যোগে কর্মীসভা অনুষ্ঠিত দ্রুত নির্বাচন দিয়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করুন-অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া হাসিনাবিরোধী আন্দোলনে যাঁরা ছিলেন সবাইকে নিয়ে সরকার গঠন করা হবে-বরকত উল্লাহ বুলু

কুমিল্লায় স্কুলের অনিয়মের কমিটিকেই পুনরায় অনুমোদন

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, মার্চ ১৩, ২০২৪,
  • 115 Time View

বরুড়া প্রতিনিধি।।

কুমিল্লার বরুড়ায় অনিয়মের কারণে ৮ মাস ঝুলিয়ে রাখা একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটিকেই অবশেষে অনুমোদন দিয়েছে শিক্ষা অফিস। অলৌকিক কারণে সেই কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে স্থানীয় দুজন ব্যক্তি শিক্ষা অফিসে দুটি পৃথক লিখিত অভিযোগও দিয়েছিলেন। কিন্তু সেসব অভিযোগের কোনো তদন্ত কমিটি কিংবা তদন্ত না করেই ঝুলিয়ে রেখে অভিযোগের মাঝেই অনুমোদন দেওয়া হয় অনিয়ম করে করা সেই কমিটিকে। যার ফলে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে ওই এলাকায়।

ঘটনাটি জেলার বরুড়া উপজেলার আদ্রা ইউনিয়নের নাগিরপাড় শহীদ মমতাজ উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। বেশ কয়েকদিনের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এমন সব চাঞ্চল্যকর তথ্য। এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কমিটি এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য আবু জাফর মোহাম্মদ শফিউদ্দিন শামীমের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয়রা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বরুড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তরিকুল ইসলাম, উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মিজানুর রহমান এবং নাগিরপাড় শহীদ মমতাজ উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুমকি ৮ মাস ধরে ছলচাতুরী করে ওই কমিটির অনুমোদন দিয়েছেন।

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নাগিরপাড় শহীদ মমতাজ উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি হয়েছেন স্থানীয় ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী। তার কোনো সন্তান ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী না হলেও প্রধান শিক্ষক রুমকি মজুমদারকে অনৈতিক সুবিধা দিয়ে তার ছেলেকে ভর্তি দেখিয়েছেন।

প্রথমে বিষয়টি গোপন থাকলেও কমিটি সিলেকশনের মিটিংয়ে তাতে আপত্তি তোলেন বিদ্যালয়ের জমিদাতা শাহ এমরান পাটোয়ারী। তার আপত্তিতে ওই মিটিং পণ্ড হয়ে যায়। পরবর্তীতে এই ছলচাতুরীর বিষয়টি উপস্থাপন করে গত বছরের ৩মে জমিদাতা শাহ এমরান পাটোয়ারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগের ফলে আটকে রাখা হয় কমিটির অনুমোদন। নিয়মানুযায়ী সেই অভিযোগের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে তার প্রতিবেদন জমা দিতে হয়। কিন্তু অলৌকিক কারণে সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করেনি উপজেলা শিক্ষা অফিস।

গত ডিসেম্বরে সেই কমিটির অনুমোদনের খবর রটালে স্থানীয় জিল্লুর রহমান নামের আরও এক স্থানীয় বাসিন্দা উপজেলা শিক্ষা অফিসার তরিকুল ইসলামের বরাবর আরও একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী কমিটির অনুমোদনের জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে পারেন বলে উল্লেখ করা হয় অভিযোগে। ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবারও আটকে যায় কমিটির অনুমোদন।

মাস তিনেক পর প্রস্তাবিত কমিটির তালিকা উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে প্রত্যাহারও করা হয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে প্রত্যাহার করা সেই কমিটিকেই আবারও চূড়ান্ত করে অনুমোদন দেওয়া হয়।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০১৯ সালের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য হবে ১১ জন। সদস্য হতে হলে অবশ্যই তাকে বিদ্যালয়ের নারী/পুরুষ অভিভাবক হতে হবে। ওই ১১ জন সদস্য থেকে ১জনকে সভাপতি করা হবে। সভাপতিকে অবশ্যই স্নাতক ডিগ্রিধারী হতে হবে। কিন্তু ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী শুধুমাত্র ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি হওয়ার জন্য তার সন্তানকে ভর্তি দেখিয়ে রেখেছেন। এটার জন্য তিনি প্রধান শিক্ষক রুমকিকে অনৈতিক সুবিধা দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে সাবেক কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আমির হোসেন মিলন বলেন, শুধুমাত্র একটি অনিয়মকে নিয়ম করার জন্য ৮মাস ধরে চেষ্টা চালানো হয়েছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসার অনিয়মের বিষয়টি জানার পর ওই কমিটির অনুমোদন দিবেন না বলেও জানিয়েছিলেন। তিনি প্রস্তাবিত কমিটির তালিকা প্রত্যাহারও করান প্রধান শিক্ষককে দিয়ে। কিন্তু ৮ মাস পর কোন অজ্ঞাত কারণে সেই কমিটিকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে আমরা সেটা জানি না। একটা অনিয়মকে কেউ যদি প্রশ্রয় দেয় তাহলে সেই অনিয়মটাই একসময় নিয়ম হয়ে দাঁড়ায়।

অভিযোগকারী জিল্লুর রহমান বলেন, সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী একটি বিদ্যালয়ের সভাপতি হতে হলে তাকে অবশ্যই ডিগ্রি পাশ হতে হবে এবং তার সন্তান বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হতে হবে। আমি যখন দেখলাম ইকবাল পাটোয়ারী কোনো সন্তান বিদ্যালয়ে পড়ে না, তখন সত্যটা তুলে ধরে শিক্ষা অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু ওই অভিযোগের কোনো তদন্ত কমিটিও হয়নি, আমার অভিযোগ সত্য কি মিথ্যা সেটাও জানানো হলো না। গোপনে সেই কমিটিকেই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। শিক্ষাব্যবস্থায় যদি এমন অনিয়ম চলে তাহলে আমাদের ছেলেমেয়েরা কী শিখবে?

এ বিষয়ে জানতে ইকবাল হোসেন পাটোয়ারীর সাথে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও তার কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুমকি বলেন, ভোটার হালনাগাদ আমিই করেছি। যাকে নিয়ে আপত্তি তোলা হচ্ছে তার সন্তান স্কুলে ভর্তি আছে। স্কুলে আসুক বা না আসুক সেটা তো দেখার বিষয় নয়। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে ওই সন্তানের ইউনিক আইডি আমাদের এখানে করা। সুতরাং আমরা নিয়মের মধ্যে থেকেই সব করেছি।

বরুড়া উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মিজানুর রহমান অনিয়মের কমিটি ৮ মাস ঝুলিয়ে রাখার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, প্রধান শিক্ষক ক্লিয়ারেন্স দিয়েছেন বলেই আমরা সেই কমিটির অনুমোদন দিয়েছি। তবুও লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার তরিকুল ইসলাম বলেন, প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সুপারিশ করেছেন বলেই কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। দুটো অভিযোগের বিষয় এড়িয়ে গিয়ে নতুন করে অভিযোগ পেলে ওই কমিটি ভেঙে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।

বরুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নু এমং মারমা মং বলেন, বিষয়টি শিক্ষা অফিসের বিষয়। আমি শিক্ষা অফিসারের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে বিস্তারিত জেনে জানাতে পারব।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. সফিউল আলম বলেন, বিদ্যালয়ের কমিটি গঠন উপজেলা শিক্ষা অফিস পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। এখানে জেলা অফিসের কর্তৃত্ব নেই। আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ দিলে আমরা সেটি উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে ফরোয়ার্ড করে তাকে তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেই।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category