দেবব্রত পাল বাপ্পী, লাকসাম প্রতিনিধি:
কুমিল্লার আয়কর বিভাগ ও বন বিভাগ লাকসাম সার্কেলের অধীনে শত শত করাতকলের অবৈধ বানিজ্যে সরকারী রাজস্ব ফাঁকির মহোৎসব চলছে। লাকসাম, নাঙ্গলকোট, নবগঠিত লালমাই, বরুড়া ও মনোহরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্নস্থানে যত্রতত্র ভাবে সরকারী নিবন্ধনবিহীন ওইসব করাতকলগুলোর দৌরাত্ব যেন থামছে না। স্থানীয় বন বিভাগ এ নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নেই। এ অঞ্চলের ফরেষ্টার জোনাল মোয়াজ্জেম হোসেন শিপনের যোগদানের পর থেকে বন বিভাগের অস্তিত্ব যেন হারিয়ে যাচ্ছে। শহর এলাকায় হাতেগোনা কয়েকটি করাত কলের সরকারি নিবন্ধন থাকলেও তাও আমার মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে। এ অঞ্চলের বেশির ভাগ করাতকল ব্যবসা চলছে বন বিভাগ কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রশাসনের কমিশন বানিজ্যের মধ্যদিয়ে। অথচ সরকারের রাজস্ব আদায়ে দায়িত্বশীলদের কোন ভূমিকা নেই।
জেলা দক্ষিনাঞ্চলের স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, ওইসব এলাকাগুলোতে সরকারী বিধিমালা কিংবা নিয়মকানুনকে উপেক্ষা করে স্থাণীয় সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নাকের ডগায় ব্যাঙের ছাতার মতো অবৈধ ভাবে গড়ে উঠেছে করাতকলগুলো। অথচ সরকারী নিয়ম মতে পৌর/ইউপি ট্রেড লাইসেন্স, অনাপত্তি ছাড়পত্র, পরিবেশ সনদ, বন বিভাগের প্রত্যয়নপত্র ও শিল্প-বানিজ্য দপ্তরের ছাড়পত্রসহ ডিসি সনদ বাধ্যতামূলক থাকার কথা থাকলেও ওইসবের ধারে কাছেও যাচ্ছে না করাতকল মালিকরা। ওইসব তদারকি স্থানীয় বন বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব অতি মূখ্য হলেও রহস্যজনক কারনে তা অনেকটাই পর্দার অন্তরালে।
অপর দিকে বন বিভাগের আওতাধীন পুরানো সড়কগুলোর বাগানের গাছগুলো নামে মাত্র নাটকীয় টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি করে বন বিভাগের কর্মকর্তারা হাতিয়ে নিচ্ছেন কয়েক লাখ টাকা। ফলে বন বিভাগের অস্তিত্ব হুমকি হয়ে দাড়িয়েছে। সূত্রগুলো আরও জানায়, ওইসব করাতকলগুলো উপজেলা সদর, হাটবাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কাঁচাপাকা সড়কের পাশে ও হাসপাতাল-ক্লিনিকের পাশে অবস্থিত। এতে ধুলা-বালু, তুষ, ছাঁই উড়ে এলাকার পরিবেশ দূষনে স্বাস্থ্যহানীর ঝুঁকি বাড়ছে। স্থাণীয় বন বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর কর্মকর্তাদের পকেট বানিজ্যের কারনে এসব নিরসনে যেন নীরব দর্শক। অথচ প্রতিবছর সরকারী রাজস্ব আয়ে স্থানীয় বন বিভাগ কর্মকর্তার মোটা অংকের অর্থ আদায়ে যেন ভানুমতির খেল। করাতকল মালিকরা স্থাণীয় প্রশাসনের দায়িত্বহীনতা ও পেশী শক্তির ক্ষমতার দাপটে তাদের অবৈধ বানিজ্যে তারা দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে। পাশাপাশি বন বিভাগ কর্মকর্তার দায়িত্বহীনতায় এ অঞ্চলে অসংখ্য ফার্নিচার দোকানও ওদের সাথে তাল মিলিয়ে সরকারী রাজস্ব ফাঁকির মহোৎসবে যোগ দিয়েছে। ওইসব করাতকল ও ফার্নিচার দোকানে রাতের অন্ধকারে বিভিন্ন সড়কের চোরাইগাছ এবং চোরাই পথে আসা বিদেশী গাছের ব্যবসা জমে উঠেছে। স্থাণীয় বন বিভাগের করাতকল-ফার্ণিচার দোকানের তালিকার সাথে বাস্তবে কোন মিল নেই।
সূত্রগুলো আরও জানায়, জেলা দক্ষিনাঞ্চলের উপজেলা ও পৌরশহরে ওইসব প্রতিষ্ঠানের চেয়ে গ্রামাঞ্চলের চিত্র ৮/১০ গুন বেশি। করাতকল ও ফার্র্নিচার দোকানের সরকারী আয়করসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর অনুমতি সনদ নিতে প্রচুর অর্থ লাগে এবং স্থাণীয় বনবিভাগ কর্মকর্তার নানাহ হয়রানি তো আছেই ফলে তারা ওইসবের দিকে না গিয়ে অবৈধ বানিজ্যে আগ্রহ বেশি।
এছাড়া স্থাণীয় প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালত কিংবা আয়কর-পরিবেশ দপ্তর আন্তরিক হলেই এ অঞ্চলের শত শত করাতকল ও ফার্ণিচার দোকান সরকারী নিয়মে আনা সম্ভব।
এ বিষয়ে ৫টি উপজেলার একাধিক করাতকল ও ফার্ণিচার দোকান মালিক কথা বলতে নারাজ। তবে কেউ কেউ বলছেন ভিন্ন কথা। দীর্ঘদিন আমরা এ পেশা চালিয়ে আসছি। কোন দিন কোন সমস্যা হয়নি। তবে বিশেষ বিশেষ দপ্তরগুলোর লোকজন আসলে তাৎক্ষনিক আমাদের সমিতির নেতারা ম্যানেজ করে ফেলেন। এখানে স্থাণীয় প্রশাসন কিংবা মিডিয়াকর্মীদের কোন ব্যাপার নেই। এ অঞ্চলে প্রায় ৫ শতাধিক করাতকল ও সহস্রাধিক ফার্নিচার দোকান রয়েছে।
এ ব্যাপারে এ অঞ্চলের ফরেষ্টার জোনাল মোয়াজ্জেম হোসেন শিপনের মুঠোফোনে বার বার চেষ্টা করেও কোন বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।