লেখক: সাজ্জাদ হোসেন,রাজনীতিবিদ
কোন শিল্পপতি কল কারখানা যাদের আছে তারা রাজনীতি করা উচিত না। কারন সরকার পরিবর্তন হলে কলকারখানার উপর আঘাত আসে। কোন বড় ব্যবসায়ী রাজনীতি করা উচিত না, কেননা ক্ষমতায় গিয়ে কিভাবে ব্যবসার উন্নতি হবে সেদিকে চিন্তা থাকে। প্রত্যেক মানুষের নির্দিষ্ট একটি ব্যাংকে আইডি কার্ডের মত একটি ব্যাংক একাউন্ট থাকবে যাতে করে সারা জীবনের আয় এবং ব্যয় একই অ্যাকাউন্টে থাকে। তাহলে দুর্নীতির মাত্রা কমে আসবে। প্রত্যেক মানুষের একটির বেশি অ্যাকাউন্ট থাকতে পারবে না। এখান থেকে আয় হলে ইনকাম ট্যাক্স কেটে নেবে, লস হলে সরকারের কাছ থেকে সাহায্য পাবে। যৌক্তিক কারণ থাকলে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হলে অথবা আগুনে পুড়ে গেলে অথবা শ্রমিক আন্দোলনে ফ্যাক্টরি ক্ষতিগ্রস্ত হলে ইত্যাদি কারনে সরকারী অনুদান পাবে। আগে শিক্ষকরা রাজনীতি করতো এবার দেখা গেল তারা রাজনীতির বিষয়ে অপমানিত হচ্ছে। সকল শিক্ষককে রাজনীতির উর্ধ্বে থাকতে হবে। কেউ কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য হতে পারবে না, বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে পারবেনা। ছাত্রদের সামনে শুধু সরকার কর্তৃক নির্ধারিত জাতীয় দিবস ছাড়া অন্য দিবসে আলোচনা করতে পারবেনা, তাও সেন্সর করতে হবে, বন্দনা কম করতে হবে। রাজনীতিবিদদেরকে আরো স্বচ্ছ জবাবদিহিতার মাঝে আনতে হবে।
সরকার পরিচালনা করতে যেয়ে সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, সরকারি আমলাদের নির্দিষ্ট পরিমান সিসির গাড়ি ব্যবহার করতে দিতে হবে। আনলিমিটেড সিসির গাড়ি আনলে মানুষ মনে করে এমপি হলে বড় গাড়ি চালাতে পারে। এটা যখন দেখে তখন মানুষের কলিজায় আঘাত লাগে। ব্যবসা করে বড়লোক হয়ে তার প্রয়োজনে বড় গাড়ি চালাতে পারে। কিন্তু ব্যবসা-বাণিজ্য নাই শুধুমাত্র এমপি হয়ে, মন্ত্রী হয়ে, সরকারি আমলা হয়ে বড় বড় গাড়ি চালাবে জনগণের ট্যাক্সের টাকায় এটা যাতে না হয় বর্তমান সরকারকে এ ব্যবস্থা নিতে হবে। পরিবারতন্ত্র থেকে রাজনীতিবিদদেরকে বাহিরে আনার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। যেমন একজন এমপি হওয়ার পরে তারপর পরবর্তী প্রজন্মকে ২০ বছর পরে নির্বাচন করার অধিকার দিতে হবে, না হয় এমপি থাকতে মেয়ে কে এমপি, ছেলেকে এমপি, শালাকে এমপি, বউকে উপমন্ত্রী, বড় ছেলেকে মেয়র, ছোট ছেলেকে উপজেলা চেয়ারম্যান, ছেলের বউকে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, নিজে উপজেলা চেয়ারম্যান, মেজ ভাই জেলা পরিষদের সদস্য, ছোট ভাই ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য, বাপরে বাপ সবকিছু নিজেদের মধ্যে।
বিশেষ করে আওয়ামী লীগ-বিএনপি জাতীয় পার্টির মধ্যে এ প্রবণতা বেশি দেখা যায়। আমি বলতে চাই, এমপির ছেলে এমপি হবে এমন কোন কথা নাই, মন্ত্রীর ছেলে মন্ত্রী হবে এমন কোন কথা নাই। সার্বক্ষণিক রাজনীতি করে ২০-৩০ বছর পরে যদি কেউ নতুন করে সাজিয়ে এমপি হতে পারে হবে আর না হয় অন্য কাজ কর্ম করবে। রাজনীতিবিদদের সকাল বিকাল অনলাইনে সম্পদের বিবরণী আপগ্রেড করতে হবে। আমলাদের সম্পদের বিবরণী আপগ্রেড করতে হবে।
বন্যা প্রতিরোধের একটা প্রস্তাব,
বাড়ি থেকে নালা খাল পর্যন্ত আনতে হবে,খাল খনন করে মাটি উত্তোলন করে জমি ভরাট করতে হবে। তাহলে নদীর খালের নাব্যতা বৃদ্ধি পাবে। নৌযান চলাচলের সুবিধা হবে, বাড়ি উঁচু করে তৈরি করতে হবে। পরিকল্পিত দুইটা বাড়ি না করে, দুইটা ঘর না করে, একটা বহুতল ঘর করলে বন্যার সময় ভাঙ্গার সময় কিছুটা হলেও আশ্রয় পাবে। আগের যোগাযোগ ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে, নদী খনন, খাল খনন সারাবছর করে নদীপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। কারণ মনে রাখতে হবে আমরা নদীমাতৃক দেশের লোক। নদীর একটা প্রকৃতি আছে, তাকে কষ্ট দিলে মানুষ কষ্ট পায়, খালকে কষ্ট দিলে মানুষ কষ্ট পায় এটাই নিয়ম। গাছ গাছরা লাগানো আরো ব্যাপক হারে বাড়াইতে হবে। গত সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সারাদেশে চারতলা ভবন করেছে। সময়ের দাবি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র করতে হলে তা ১০তলায় রূপান্তরিত করতে হবে। লিফট লাগানো থাকবে, লিফ্ট সময় সময় ব্যবহার করা হবে। তাতে জমি রক্ষা হবে। আশ্রয়ন প্রকল্প নতুন করে গ্রহণ করতে হবে না। একের ভিতর দুই একদিকে পড়ালেখা হবে অন্যদিকে বিপর্যয়ের সময় মানুষকে আশ্রয় দেওয়া যাবে।
প্রশাসনকে নতুন করে শক্তিশালী করে জবাবদিহিতার মধ্যে এনে পুনর্গঠন করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নতুন করে সাজাতে হবে। কারণ ইতিমধ্যে তা ভেঙ্গে পড়েছে। ছাত্রদেরকে পড়ালেখায় ফিরিয়ে আনতে হবে, ভালো পরীক্ষার মাধ্যমে কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগ করতে হবে, না হয় সার্টিফিকেট মূল্যায়নের মাধ্যমে যে যেই বিষয়ে পড়ালেখা করেছে এই বিষের উপর কর্মদক্ষতা সৃষ্টি করতে হবে। ফিজিক্স এ পড়ালেখা করে এসপি হবে এটা হয় না, ফিশারিজে পড়ালেখা করি আর্মি হবে এটা হয় না, ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়ালেখা করি ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে, ডাক্তারিতে পড়ালেখা করে ডাক্তার হতে হবে।
সকল কিছু বিষয়ভিত্তিক হতে হবে। মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বিষয়ভিত্তিক অভিজ্ঞতা তাদের থাকতে হবে। একজন স্থানীয় সরকার বিষয়ে কিছুই জানে না তাকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় দিলে লাভ কি? যে প্রশাসন পরিচালনা করে নাই কোনদিন, তাকে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিলে কি লাভ হবে? যে রিলিফ ওয়ার্কে কোন কাজই করে নাই এবং দুর্যোগ কোনদিন মোকাবেলা করে নাই তাকে কেন দুর্যোগ মন্ত্রণালয় দেওয়া হবে? আইন প্র্যাকটিসে জড়িত এমন লোককে আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিতে হবে। এক কথায় বিষয়ভিত্তিক অভিজ্ঞ লোকদেরকে সেটআপ করতে হবে।
নির্বাচন প্রক্রিয়া সচ্ছ করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। এই দেশের মানুষ ভোট দিতে চায়, ভাত খেতে চায়, কথা বলার অধিকার চায়। এমনটি হলে আর কোনদিন আন্দোলন করবে না। সকলেই সময় সময় নির্বাচন করবে, নির্বাচনের মাধ্যমে যারা মানুষের মন জয় করবে তারা ক্ষমতায় থাকবে। যারা মানুষের মন জয় করতে পারবে না তারা বিরোধী দলে অবস্থান করবে। ক্ষমতাই শুধু রাজনীতি নয়, রাজনীতি হলো অন্য বিষয়, মানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলা, মানুষের জন্য মানুষ হিসেবে কথা বলা, ছাত্রদের অধিকার নিয়ে কথা বলা, শ্রমিকের অধিকার নিয়ে কথা বলা, কর্মচারীদের অধিকার নিয়ে কথা বলা, কর্মকর্তাদের সুখ দুঃখ দেখা। দেশের সাধারণ মানুষের অন্ন,বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা সবকিছু নিশ্চিত করা। কারণ আমি নিজের টাকা দিয়া করবো না, আমার বাবার টাকা দিয়েও করবো না, জনগণের ট্যাক্সের টাকা দিয়া জনগণের জানমাল হেফাজত করাই সরকারের দায়িত্ব।
ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
লেখক: সাজ্জাদ হোসেন,রাজনীতিবিদ